প্রবন্ধ

অপরূপকথা মেঘমল্লার

Spread the love

আমার পরম সৌভাগ্য, সর্বসাধারণ দেখিতে পাইবার আগে আমি ‘মেঘমল্লার’ দেখার সুযোগ পাইয়াছি। এ পর্যন্ত দুইবার দেখিয়াছি। আশা করি ভবিষ্যতেও দেখিব। প্রথমেই ছবির রূপের কথা বলিতে হয়। এই ছবির রূপ এককথায় অপরূপ। ছবি দেখিবার পর আমার সঙ্গে যাঁহারা আলাপ করিয়াছেন তাঁহাদের এক একজন বলিতেছেন–বাংলা ছবিতে বহুদিন এমন বৃষ্টি হয় না। আমার এক মহান বন্ধু তবুও এই ছবি দেখিয়া চোখ ভিজান নাই। তিনি বৃষ্টির ফোটার খুঁত ধরিয়াছেন। দেখিয়াছেন প্রতিদিনই বৃষ্টির ফোটা একই জায়গায়–একই জানালায়–একই ধারায় ঝরিয়াছে। তিনি বলিয়াছেন–মানুষ এমন নিখুঁত ভাষায় কথা বলে! এ কেমন মফস্বল যেখানে কিষাণের পদপাত নেই!

border=0

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমার ধারণা–এই খুঁত আরো খুঁত অনেকেই ধরিবেন। আমি এই মাননীয় মহোদয়কে বলিয়াছি–এই ছবিকে ‘উপকথা’ মনে করিবেন তো ভুল করিবেন। তো জানি, অনেকেই বলিবেন ‘মেঘমল্লার’ বাংলাদেশের–১৯৭১ সালের অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের–উপকথা। এমন বলায় হয়ত কোন ভুল নাই। উপকথা বা পরাকথা (ফ্যাবল বা প্যারাবল) আকারে ছবিটি দেখা যাইতেই পারে। এই ছবি মুক্তিযুদ্ধের ছবি ইহাই বা কে অস্বীকার করিবে!

শুদ্ধ মনে রাখিতে হইবে, ছবি দেখিবার পদার্থ মাত্র নহে। ছবি পড়িবার পদও বটে। জিল দোলুজের কেতাব পড়িয়া যাহাদের নজর ঘুরিয়া গিয়াছে তাহাদের বলিব সিনেমায় শুদ্ধ ছবি থাকে না, চোখও লাগিয়া থাকে। দোলুজের বদনজরে পড়িয়াছেন তো গিয়াছেন। উপকথা আর পুরাকথার ভেদ ভুলিয়াছেন। তো আপনি অপরূপকথার ভেদ ধরিতে পারিবেন না–ইহা তো জানা কথাই।


তারপরও আমি শাক্ত বিনয়ের সহিত নিবেদন করিব–‘মেঘমল্লার’ শেষবিচারে রূপকথা বিশেষ। রূপকথার প্রকৃত অর্থ–যতদূর বুঝি–পরের কথা। কথাটা একটু বুঝাইয়া বলিতে হইবে। গ্রিক ভাষায় ‘আগোরা’ মানে ‘হাটবাজার’। তাই ‘আলেগোরা’ মানে যাহা হাটবাজারে বলা যায় না। অর্থাৎ যাহা প্রকাশ্যে বলা যায় না। ইংরেজি ‘অ্যালেগরি’ মানে তাই গোপন কথা। আমি ধরিয়া লইয়াছি ভবিষ্যতের বা পরের কথাও তাই। যাহা এখনই বলা যায় না। উপকথা ও রূপকথার মধ্যে ভেদ আছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পেও এই ভেদরেখা খানিক দেখা গিয়াছে। জাহিদুর রহিম অঞ্জন তাহাকে বেশ বড় করিয়া তুলিয়াছেন।

প্রথমেই প্রশ্ন উঠিবে–আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পটি বলিতেছে যে সে কে? সে দেখা যাইতেছে সর্বদ্রষ্টা। অর্থাৎ সে যেন গল্পের সব জায়গা সব পাত্র দেখিতে পাইতেছে আর বলিয়া যাইতেছে বলিয়া যাইতেছে। গল্পের যাহাকে বলা যায় নায়ক তাহার নাম নূরুল হুদা। নূরুল হুদা নামের একার্থ হয়–যে পথ দেখাইতেছে তাহার আলো। এই আলো নূরুল হুদা যেখানে যায় সেখানেই থাকে।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প বৃষ্টি দিয়া শুরু, নূরুল হুদা দিয়া শেষ। বৃষ্টি আর হুদার মধ্যখানে আছে রক্ষাকবচ অর্থাৎ বৃষ্টিরোধক–রেইনকোট। এই রেইনকোটও আবার পরস্ব। হোক সেই পর বড়ই আপন-বৌয়ের ছোটভাই। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের নজর এই পরম পূজনীয়া বা ফেটিশ দ্রব্যের মধ্যে স্থির হইয়া আছে। তাই গল্পের নাম ‘রেইনকোট’ হইয়াছে। মনে রাখিতে হইবে দ্রব্য মানে যাহা দ্রবীভূত হইতে পারে। ফেটিশ দ্রবীভূত হয় না। রেইনকোট ফেটিশের বিশেষ বটে। ইহা অদ্রব্য।
meghmollar-2.jpg

জাহিদুর রহিম অঞ্জনের চোখ আলাদা। অঞ্জন এই গল্পকে বাংলাদেশের আকাশ হইতে দেখিয়াছেন। মেঘমল্লারের প্রদর্শক তাহার দেখানোটা শুরু করিয়াছেন ‘স্মৃতি’ হইতে। ১৯৭১ স্মৃতিতে ভাসিয়া উঠিয়াছে বাসাবদলের গল্প আকারে। সমগ্র বাংলাদেশে বা আন্তজেলা সাধারণ পরিবহনে করিয়া বাসার খাটপালঙ্ক চেয়ারটেবিল আসবাবপত্র অন্য কোন বাসায় যাইতেছে। বোন, বোনের মেয়েকে লইয়া যাইতেছে লম্বাচুল দাঁড়িগোপে ঢাকা ভাই। কোথায় যাইতেছে তাঁহারা? ঢাকায়? ঠিক নাই। ইহাকেই তো বলে শহীদ পরিবার? শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবার? তাই না?

‘স্মৃতি’ শব্দের গোড়ায় আছে ‘স্মরা’। ইহার আদি অর্থ ভালবাসা। ইংরেজি ‘স্মার্ট’ কথাটির এখান হইতেই উৎপত্তি হইয়াছে। সংস্কৃতের মত বাংলায়ও আজিকালি ‘স্মার্ত’ কথাটা ব্যবহৃত হইতে দেখা যায়। অর্থে সামান্য ভেদ অবশ্য দাঁড়াইয়া গিয়াছে। বলিতেছিলাম কি, মেঘমল্লার এই জন্য একটা ভিন্ন গল্প হইয়া উঠিয়াছে। ইহাকে ঠিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পের ‘ছায়া অবলম্বনে’ বানানো ছবি বলা তাই কিছুটা মায়াবী কথা হইয়া যাইতেছে।

পার্থক্যের মধ্যে, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বলিয়াছেন নূরুল হুদা ও আসমা দম্পতির একটি পাঁচ বছরের ছেলে আর একটি আড়াই বছরের মেয়ে আছে। জাহিদুর রহিম অঞ্জন ছেলেটি খাইয়া ফেলিয়াছেন। মনে পড়ে, বৃষ্টির ঝমঝম বোল দিয়া এই গল্পের শুভ মহরৎ হইয়াছিল–‘ভোররাত থেকে বৃষ্টি। আহা! বৃষ্টির ঝমঝম বোল’। আর আখতারুজ্জামান ইলিয়াস গল্পটি ছাড়িয়া দিলেন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বন্দীনির্যাতন শিবিরে নির্যাতনকারী সৈন্যদের চাবুকের বাড়ি নূরুল হুদার পিঠে পড়িবার শব্দে।

ইলিয়াসের সর্বদ্রষ্টা কথক জানাইতেছেন–‘রেইনকোটটা এরা খুলে ফেলেছে, কোথায় রাখল কে জানে। কিন্তু তার ওম তার শরীরে এখনো লেগেই রয়েছে। বৃষ্টির মত চাবুকের বাড়ি পড়ে তার রেইনকোটের মত চামড়ায় আর সে অবিরাম বলেই চলে, মিসক্রিয়েন্টদের ঠিকানা তার জানা আছে’। অঞ্জন এখানে একটি ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি যোগ করিয়াছেন–তাহার সঙ্গে একটি পিস্তলের গুলির আর্তনাদও। নূরুল হুদার শাহাদতবরণের মধ্য দিয়া ছবির আখ্যান শেষ হইয়াছে।


আমার প্রস্তাব–মেঘমল্লার ছবিটি পরের কথা অর্থে অপরূপকথা বা অ্যালেগরি বিশেষ। ইহার মধ্যে বেশি ইতিহাস খুঁজিতে যাওয়া বাতুলতা মাত্র। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ইতিহাসের কুহক হইতে পুরাপুরি ছাড়া পাইয়াছেন বলিতে পারিলে আমিও ছাড়া পাইতাম। কিন্তু না, পারিতেছি না। পক্ষান্তরে জাহিদুর রহিম অঞ্জন ইতিহাস হইতে ছুটিয়া আসিয়াছেন অপরূপকথার ভিতরে। আর একটু বুঝাইয়া বলিব। মনে রাখিতে হইবে, অ্যালেগরি আর মিথ (বা পুরাকথা) ঠিক এক পদার্থ নহে।

মুক্তিযুদ্ধ তো মুক্তিযুদ্ধই ছিল। এখনও কি তাহা মুক্তিযুদ্ধ আছে! এখন মানে এই–ধরা যাক–গোটা চল্লিশ বছর পর। এখন হইতে দুই কি পাঁচ শত বছর পরও কি এই মুক্তিযুদ্ধ এই মুক্তিযুদ্ধই থাকিবে? এই এখন এখানে বসিয়া তখন সেখানে তাহা কেমন দেখাইবে? ভিন্ন কিছু হইবে না? বাসাবদলের অধিক কিছু? আমার ধারণা এই দুঃসংবাদ সবার আগে পাইয়াছেন বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের একমাত্র পুরুষ মুহম্মদ খসরু। তিনি কহিয়াছেন: ‘মেঘমল্লার’ ছবিটি দেখে এদেশের দর্শকবৃন্দ কিছুটা হোঁচট খেলে অবাক হব না।’

আমি তাঁহার সহিত দ্বিমত করিবার কোন পথ পাইতেছি না। হোঁচট তো খাইবেই। আছাড়ও খাইতে পারে। তবে কি কারণে? প্রশ্ন হইতেছে এইটাই। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত মুক্তিযুদ্ধ দেখে নাই। মুক্তিযুদ্ধ তাহাদের দেখিয়াছে। এই পরম সত্যটি বলিবার সাহস কাহার আছে? ছিল আহমদ ছফার। যে উপন্যাস পড়িলে মধ্যবিত্তকে জানিতে, বুঝিতে ও শুনিতে পারা যায় তাহাকে ‘অলাতচক্র’ বলে। আর যে ছবি দেখিলে মধ্যবিত্তকে জানিতে, বুঝিতে ও শুনিতে পারা যায় তাহাকেই কি ‘মেঘমল্লার’ বলে?

একবার ফিনল্যান্ড দেশের কোন এক কবির কবিতা তর্জমা করিয়াছিলাম। কবিতার নাম ছিল ‘বাড়ি বদলানো’। ঐ যুগে আমি কথাকথিত চলিত ভাষায় লিখিতাম।

………………………………………………………………

বাড়ি বদলানো ॥ পেন্টি সারিকস্কি

বড় পাখির দরকার বড় বাসার
ছোট পাখির ছোটতেই সারে
‘আহা, এমন সুন্দর বাড়ি বদলানোর’ হাওয়ায়
জ্বি, সত্য সত্যই জবাব দিলাম আমি, মুখ টিপে হাসলাম
আব্বা হাত বাড়িয়ে দিলেন, বললেন বিদায়
আম্মা বুকে জড়িয়ে ধরলেন, তারপর আমি চললাম
মালবাহী গাড়ি চলে গেল
যারা বাড়ি বদলানোর কাজ করে তাদের না
ঠকান সহজ দেখেন না
ওরা যেখানে আমার অপেক্ষায় বসে আছে আমি তো থাকি না সেখানে
আমার মালসামানা ওখানেই পড়ে থাকবে
আমার অপেক্ষায়
আর ওদের একটা না একটার বেশি সিগারেট ধরাতে হবে
আমার অপেক্ষায়
কিন্তু আমার টিকিটিও দেখতে পাবে না ওরা
কারণ আমি এত্তটুকুন, এত্তটুকুন একটা পাখির চেয়েও এত্তটুকুন

………………………………………………………………

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিবার সাহস হয় নাই নূরুল হুদার। ‘মেঘমল্লার’ ছবিতে দেখা যায় তিনিও শেষ মুহূর্তে সাহস করিয়া ‘জয় বাংলা’ বলিয়াছেন। মনে হইতে পারে, তাহাতেই তাহার প্রাণ গিয়াছে। ভাবিয়া দেখিলে দেখা যাইবে–তাহা না বলিলেও অধ্যাপক নূরুল হুদার প্রাণরক্ষা হইত কিনা সন্দেহ।

এই যে নূরুল হুদা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ হইয়া উঠিলেন তাহাতে ব্যক্তির ইচ্ছা বা অনিচ্ছার আয়তন কতটুকু? আখতারুজ্জামান ইলিয়াস গল্পের নাম ‘রেইনকোট’ রাখিয়াছিলেন। জাহিদুর রহিম অঞ্জন ছবির নাম ‘রেইনকোট’ রাখেন নাই। মুহম্মদ খসরু বলিয়াছেন শুদ্ধমাত্র হলিউড আর ঋতুপর্ণ ঘোষ হইতে দূরে থাকিবার মানসে। আমার মনে হয়–আরও কারণ আছে।

এই কারণ আর কিছু নহে, রূপান্তর। নূরুল হুদা তাহার ইচ্ছা অনিচ্ছা ছাড়াইয়া গিয়াছেন–বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নায়ক হইয়া উঠিয়াছেন। অনেক দিন আগে রুশ কবি মিখাইল লের্মন্তব যাহাকে ‘আমাদের কালের নায়ক’ বলিয়াছিলেন তিনি–পেচোরিন–কোন বিশেষ ব্যক্তি নহেন–তিনি একটি কালের সমষ্টির ছবি। তাহাকে খোদ লেখকের জীবনদেবতা কিংবা তাঁহার আলালের ঘরের দুলাল বন্ধুবান্ধব ভাবাও ঠিক হইবে না। খোদ লের্মন্তব এই দাবি তুলিয়াছিলেন। আমার বিশ্বাস জাহিদুর রহিম অঞ্জন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের আলনায় নিজের জামা ঝুলাইয়া ঘোষণা করিয়াছেন–দেখ, এই দেখ, উচ্চশিক্ষিত বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত। নূরুল হুদার মতন আমরা সবাই নায়ক। অনুপস্থিত নায়ক। অপর শতকরা ৯৫ জন বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত এই মতন। রামচন্দ্র।
meghmollar-3.jpg


আমার এই ব্যাজ অনুমানের পক্ষে আরও একটি ইশারা পেশ করিয়া এই নাতিদীর্ঘ প্রশস্তি শেষ করিব। গোপন করিব কেন? বলিয়া রাখা ভাল–জাহিদুর রহিম অঞ্জন কমপক্ষে বত্রিশ বছর ধরিয়া আমার বন্ধু। কিন্তু এই ব্যাপারে তাঁহার সহিত কোন চক্রান্ত কি আলাপ করি নাই। আপনারা দয়া করিবেন। আমার মতামতের জন্য তাঁহাকে দায়ী করিবেন না।

অঞ্জন যে চোখে আমাদের এই ছবি দেখাইয়াছেন–আগেই বলিয়াছি–তাহা পরের চোখ। কে জানে পরমের চোখও তাই কিনা! তিনি আমাদের চোখে কোন মায়াঞ্জন বুলাইয়া দেন নাই। তাঁহার ছবিতে মেঘ আছে, বৃষ্টিবাদলা আছে কিন্তু কান্না বিশেষ নাই। মায়া কিম্বা নোনা কোন কান্না নাই। বলিতে পারেন আছে বোবা কান্না। আসমা পরিশেষে শুদ্ধ বলে, ‘আমার যেতে ইচ্ছে করছে না রে! মিন্টু!’ আকাশে হেমন্তকালের শেষে যে মেঘ উড়িতে থাকে তাহাতে কখনও বৃষ্টি হয় না এমন নহে। কিন্তু মেঘ তারপরও মেঘলাই। ফরাশি শার্ল বোদলেয়রের বিখ্যাত ‘পর’ কবিতাটি অনেক বাঙ্গালি মধ্যবিত্তই পড়িয়াছেন। আরেকবার ‘স্মরা’ করিতে দোষ কোথায়?
………………………………………………………………

পর ॥ শার্ল বোদলেয়র

“কাকে তুই সবচেয়ে বেশি চাস, বেগানা বেটা, বল দেখি? তোর বাপ, তোর মা, তোর বোন না তোর ভাই?
— আমার বাবা নাই, মা নাই, বোন নাই, ভাই নাই।
— বন্ধুটন্ধু?
— কি কইলে? শব্দটার কি যে মানে আজও বুঝি নাই।
— তোর দেশ?
— জানি না অবস্থান তার কোন দ্রাঘিমায়!
— সুন্দরম?
— সানন্দে চাই তারে, সে তো দেবি থাকে অমরায়।
— সোনাদানা?
— নিকুচি করি যেমন আপনারা যার যার খোদায়!
— আহ! তো চাস কি তুই বেঘোর বিদেশি?
— আমি চাই মেঘ… ভেসে যায় মেঘ… ঐ যায়… ঐ যায়… কি দারুন মেঘ আর মেঘ…

………………………………………………………………

স্বীকার করিয়া বলিব ছবি পদার্থটা আমি বিশেষ দেখি না। অভিনয় জিনিশটাও ধরিতে পারি না। তবু বলিব শহীদুজ্জামান সেলিম আর অপর্ণার অভিনয় দেখিয়া আমিও বেমালুম অশ্রুহীন হইয়া গিয়াছি। বিশ্বাস করিতে কষ্ট হয় এই ছবি জাহিদুর রহিম অঞ্জনের যাহাকে বলে প্রথম ছবি! এক ছবি বানাইতেই উমর ৫০ হইয়া গিয়াছে। এই ছবি লইয়া অনেক দিন–আরও ৫০ বছর অন্তত–আমাদের কথা বলিতে হইবে। মুহম্মদ খসরু বলিয়াছেন, ‘মেঘমল্লার, বাংলাদেশের ছবির পালাবদল’। আহা, যদি বলিতেন–মেঘমল্লার বাংলা ছবির পালাবদল–তো আরো সত্য কথা বলিতেন।

১০ নবেম্বর ২০১৪

দোহাই
১. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ‘রেইনকোট’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র ১, পুনর্মুদ্রণ (ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স, ২০১২)।

২. মুহম্মদ খসরু, ‘মেঘমল্লার, বাংলাদেশের ছবির পালাবদল’, arts.bdnews24.com, ২১ অক্টোবর ২০১৪।

৩. Charles Baudlelaire, ‘L’étranger’, Oeuvres complètes I, Texte établi, présenté et annoté par Claude Pichois (Paris: Gallimard, 1975).

৪. Gilles Deleuze, Cinema I: The Movement-Image, trans. Hugh Tomlinson and Barbara Habberjam, reprint (Minneapolis: University of Minnesota Press, 1997).

৫. Gilles Deleuze, Cinema 2: The Time-Image, trans. Hugh Tomlinson and Barbara Habberjam, reprint (Minneapolis: University of Minnesota Press, 1997).

৬. Pentti Saarikoski, ‘Moving’, Poems: 1958-1980, trans. Anselm Hollo (West Branch, Iowa: The Toothpaste Press, 1983).

 

প্রথম প্রকাশ: ১০ নবেম্বর ২০১৪, arts.bdnews24.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *